POSTED BY:
COMMENTS:
0
POST DATE:
কর্মক্ষেত্রে সামান্য ভুলের জন্যও ঘটে যেতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। যার দরুন কর্মীর নিরাপত্তা হুমকির মুখে পরতে পারে। ঘটতে পারে প্রাণহানির মতো ঘটনা, বরণ করতে হতে পারে সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব। বাংলাদেশে আমরা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার ব্যাপারে অত্যন্ত উদাসীন যা দেশের কর্মক্ষেত্রকে করে তুলেছে অত্যন্ত ঝুকি বহুল। আর এই ঝুকির মাত্রা যে কতটা ভয়ঙ্কর তা উঠে এসেছে বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশন (ওশি) এর পরিচালিত এক সমীক্ষায়।
সমীক্ষায় দেখা যায় ২০১৭ সালে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে মোট ১ হাজার ২৪২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৩৭১ জন। এর মধ্যে ৬৭৯ জনই কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথে দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছেন। এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশন (ওশি)।
দেশের ১৫টি সংবাদপত্র ও মাঠপর্যায় থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করে ওশি। ২০১৭ সালে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে খাতভিত্তিক হতাহতের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ২০১৭ সালে পরিবহন খাতে ৪৮৮, নির্মাণ খাতে ১৭৯, পোশাক শিল্পে ৫২, স্টিল মিল ও রি-রোলিং মিলে ৮, জাহাজ ভাঙা শিল্পে ১৮ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া ৯৯ কৃষিশ্রমিক, ১০৩ দিনমজুর, ২২ গৃহকর্মী, ২৮ জেলে এবং অন্যান্য খাতে ২২১ জন নিহত হন।
প্রতিবেদনে হতাহতের ক্ষেত্রে পাঁচটি কারণকে প্রধান হিসেবে উল্লেখ করেছে ওশি। তাদের হিসাবে কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথে দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা ৪২ শতাংশ বা ৬৭৯ জন। বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে হতাহত হয়েছেন ১৪ দশমিক ২ শতাংশ বা ২২৯ জন। বজ্রপাতে হতাহত হয়েছেন ৮ দশমিক ৮ শতাংশ বা ১৪২ জন। উপর থেকে পড়ে গিয়ে হতাহত হয়েছেন ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বা ১০১ জন। বয়লার ও সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহত হয়েছেন ৬ শতাংশ বা ৯৭ জন।
কর্মক্ষেত্রে হতাহতের চিত্র প্রকাশের পাশাপাশি এ-সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জের বিষয়ও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করে ওশি। সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে বাংলাদেশ শ্রম আইন ও বিধিমালায় উল্লিখিত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট নির্দেশনার দুর্বল প্রয়োগ, শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাব, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিষয়ক জ্ঞানের অভাব, অপর্যাপ্ত শ্রম পরিদর্শন ব্যবস্থা, শিল্প-কারখানায় সেফটি কমিটি গঠনের বিধান অনেকাংশে উপেক্ষা করা ও বয়লার পরিদর্শন বিভাগের সীমাবদ্ধতা।
হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনতে সংবাদ সম্মেলনে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয় ওশির পক্ষ থেকে। তাদের সুপারিশগুলোর মধ্যে আছে—
- বাংলাদেশ শ্রম আইন ও বিধিমালার আলোকে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধানের কার্যকর প্রয়োগের লক্ষ্যে পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করা,
- শিল্প মালিক ও ব্যবস্থাপকদের জন্য ‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি নীতিমালা-২০১৩’ সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন কোর্সের আয়োজন করা।
- কর্মস্থলে শ্রমিকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করা,
- শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ইউনিট চালু করা,
- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত রোগের চিকিত্সার জন্য বিশেষায়িত চিকিত্সকের সংখ্যা বাড়ানো, পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য একটি পৃথক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা,
- নিপসমের অকুপেশনাল হেলথ অ্যান্ড সেফটি বিভাগের মাধ্যমে পেশাগত নিরাপত্তা বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করা
- এছাড়া চট্টগ্রামে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত মালিকপক্ষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা এবং এটির আধুনিকায়ন করে উন্নত সেবা নিশ্চিত করা,
- অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের পরিবার এবং আহত শ্রমিককে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনাধীন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা
- কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার পরবর্তী যৌক্তিক সময় পার হলে নিখোঁজ শ্রমিকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের সুপারিশ করেছে ওশি।